Monday, August 31, 2020

গল্প

ডর

তরুণ পাত্র

সৃঞ্জয় আজ ভীষণ খুশি। জীবনে এতো খুশি আর কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তার বহুদিনের স্বপ্ন তার নিজের একটা বাইক হবে, সেই বাইকের পিছনে থাকবে ঝিমলি, মুকুটমণিপুরের ড‍্যাম পাড় দিয়ে বাইক ছুটবে।ঝিমলির পশম পারা চুল উড়বে বাতাসে। পরেশনাথের ওখানে গিয়ে ঝিমলির চুলে গুঁজে দেবে রাঙা পলাশ; তখন ঝিমলির সারা মুখ রাঙা হয়ে উঠবে। অস্তমিত সূর্যের সাক্ষাতে ওর দুটো হাত ধরে সৃঞ্জয় বলবে "ঝিমলি আমি তোকেই ভালোবাসি--শুধু তোকে।" 

তাই শোরুম থেকে বাইকটা নিয়েই রওনা দিয়েছে মোলডুংরির দিকে। ওখানে বাঁশনালার রাস্তার ধারে অপেক্ষা করবে ঝিমলি। মাকে বলেই বেরিয়েছে বাইক নিয়ে সোজা যাবে অম্বিকানগর, মা অম্বিকার পুজো দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসবে। তাই অনেকটা সময় আজ ঝিমলির সাথে কাটানো যাবে।

ওদিকে ঝিমলিও কলেজ যাবার নাম করে বেরোবে।ওর হাতেও অনেক সময়, আজ শুধুই আনন্দ। আনন্দের লহর উঠেছে সৃঞ্জয়ের মনে।

ঝিমলি আজ সকাল থেকে কিছু খায় নি, মা অম্বিকার পুজো দেবে যে। মা কে বলে দিয়েছে এক বান্ধবীর জন্মদিন, সে সবাইকে ঐশীতে খাওয়াবে। সকাল স্নান করে তৈরি হয় ঝিমলি। আজ সেই আগুন রঙের কুর্তিটা পরেছে সে। সৃঞ্জয়ের পচন্দের রঙ এটা। সে বলে এটা পরলে না কি তাকে পরীর মতো দেখায়। সাইকেল নিয়ে যেতে হবে খানিকটা, তারপর পানমনিদের বাড়িতে সাইকেল রেখে সৃঞ্জয়ের সাথে।

সৃঞ্জয় সার্কাস ময়দান পেরিয়ে যখন আমডাংরা স্কুলের কাছে পৌঁছলো দেখে সেখানে প্রচুর লোক। কী হয়েছে জানতে বাইকটা দাঁড় করিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই একজন বাধা দিয়ে রললো "তুই যা ক‍্যানে ,ইসব আমদের সমাজের ব‍্যাপার, তরা দিকু তদের ইসবে না থাকাই ভালঅ।

কী হয়েছে? জিগ‍্যেস করে সৃঞ্জয়।

লোকটি বলে দ‍্যাখনা ক‍্যানে আমদে ঘরের মাইয়া গুলা সস্তা বঠে? উ বাবুট হপনের বিধবার কাছে দিনঅই আইসত আইজ ধইরেছে।

সৃঞ্জয় তাকিয়ে দেখে দুজন মাঝবয়সী নারী পুরুষকে হাত বেঁধে গাছে ঝোলানো আছে,আর গোটাকয় লোক মোটা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বাকিরা মজা দেখছে।ওরা বেঁচে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।

 সারা শরীর দিয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে যায় সৃঞ্জয়ের... ঝিমলি ও যে এদেরই মেয়ে!

অলঙ্করণ : সংগ্রাম শীল 

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়

প্রথমেই প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানাই। করোনাকালীন আবহে তাঁর মতো একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত মানুষকে আমরা হারালাম। এখন ...