অক্সিজেন
সন্দীপ সেনগুপ্ত
বাসটা সেদিন হঠাৎ করে প্রচণ্ড জোরে ব্রেক মেরে দাঁড়িয়ে গেছিল। ড্রাইভারের পাশে বসে থাকায় ঝাঁকুনিটা সামলে নিতে পেরেছিল অমিত। কিন্তু পেছনে বসে থাকা লোকগুলোর কেউ কেউ ছিটকে লাফিয়ে উঠেছিল। কারো মাথা ঠুকে গেছিল সিটের পেছনে।
-কিরে ভাই মারবি নাকি?
-গাড়ি চালাতে জানিস না?
-নতুন ড্রাইভার নাকি? এদের যে কে লাইসেন্স দেয়?
- এইসব শালাকে না মারলে কিছুই শিখবে না দাদা।
-ঠিক বলেছেন এরা ভদ্রলোকের ভাষা বোঝে না।
হাওয়া ক্রমশ গরম হচ্ছিল।
ঠিক এমন সময় বাসের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত পায়ে উঠে এসেছিল মেয়েটা। ব্ল্যাক জিন্সের ওপরের টপটা উপস্থিত জনতার দৃষ্টিকে যেন আহবান করছিল।উঠে এসেই বক্ষবিভাজিকা ঘেঁষে সানগ্লাসটা গুছিয়ে রাখতে রাখতে দ্রুত খুঁজে নিয়েছিল একটা ফাঁকা সীট। সেদিকে তাকিয়ে সেই গরম হাওয়া অনেকটাই ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল।
একবার আড়চোখে দেখে নিয়ে অমিত আওয়াজ দিয়েছিল- ‘অক্সিজেন ! অক্সিজেন!’
আসলে জুন মাসের সেই বিকেলটা এতই গরম ছিল যে ড্রাইভার ছেলেটা বারবার ঘ্যান ঘ্যান করছিল- আজকে বীভৎস গরম। ইঞ্জিনের গরমে আরও দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। একটুও হাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি না হলে আর পারছি না।
-আরে ভাই তুই তো তোর অক্সিজেনের জন্য আমাদের মেরেই ফেলবি মনে হচ্ছে।
মুচকি হেসে আবার স্পীড তুলেছিল ছেলেটা।
মেয়েটা তখন গুছিয়ে বসে লিপস্টিকটা ঠিক করে নিল। একবার দেখে নিল আইলাইনারটা ঠিকঠাক আছে কিনা। যেন এতক্ষণ কোন কথাই ওর কানে ঢোকেনি।
যতক্ষণ বাসে ছিল ততক্ষণ অনেকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সে।অমিতও বেশ কয়েকবার মেপে নিয়েছিল তাকে। তারপরে বোধ হয় মিন্টো পার্কের ওদিকটায় মেয়েটা নেমে গেছিল।
সেই বিকেলটার কথা প্রায় ভুলেই গেছিল অমিত। আজকে হঠাৎ হাসপাতালের একত্রিশ নম্বর বেডে একটা আবার একটা ঝাঁকুনি দিয়ে সেই বিকেলটা ফিরে এল। করোনার প্রকোপে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে যখন হাঁপাচ্ছিল সে ঠিক তখনই অক্সিজেন মাস্কটা ব্যস্ত হাতে লাগিয়ে দিচ্ছিল যে মেয়েটা, পিপিই পরা থাকলেও আড়ালে থাকা সেই মুখটাকে অমিত ঠিকই চিনতে পেরেছিল।
অলঙ্করণ : চণ্ডীদাস সামন্ত
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete