দায়
তাপস পাত্র
"মানলাম স্যারকে তুই শ্রদ্ধা করিস। উনি তোকে স্নেহও করেন। তোকে এ ব্যাপারে ঠাট্টাও করেছি। তাই বলে কী বলছিস তুই এটা?" শান্তম রীতিমতো উত্তেজিত।
"না বলার কী আছে? তোর অসুবিধেটা কোথায়?" খর চোখে শান্তমকে জরিপ করল নৈঋতা।
"আমার অসুবিধের কথা কেন বলছিস। অসুবিধেটা তো তোর।"
"হাস্যকর কথাবার্তা। এতে আমাদের দুজনেরই সুবিধে।" নৈঋতাকে যেন মজায় পেয়েছে," তুই কবে কাজ পাবি আদৌ পাবি কিনা গ্যারান্টি আছে? পিএইচডির স্কলারশিপ আর তিনটে বছর। তারপর? সে যাই হোক, একটা রুচিশীল ভদ্র সুশিক্ষিত বুড়োমানুষ। প্রাক্তন অধ্যাপক। একা থাকেন। অর্থ বিত্ত বাড়ি গাড়ি কিছুরই তো অভাব নেই। ওর কিছু মনোযোগ, যত্ন, সান্নিধ্য দরকার। বিনিময়ে আর সব কিছু আমার। একটা সহজ ডিলিংস। কী বলিস?" শেষ অংশটা কি বড়ো বেশি বলা হয়ে গেল? ভাবল নৈঋতা।
"পৃথিবীতে কতোজনার কতোকিছুই দরকার। তুই পূরণ করতে পারবি?" শান্তমের তখনো মেনে নেওয়ার লক্ষণ নেই।
"আমাকেই বা সবার সব কিছু পূরণ করতে হবে কেন? আমি যতোটুকু পারি যা পারি।" বলল নৈঋতা।
"তাই বলে একটা সত্তর বছরের বুড়োকে তুই বিয়ে করবি? সে তো কিছুদিনেই টেঁসে যাবে তখন কী করবি তুই?"
"তখন তুই আমি বিয়ে করে নেব।" মৃদু হেসে বলল নৈঋতা।
"লোকটা কবে মরবে তার ঠিক আছে? অতোদিন অপেক্ষা করতে পারব না।"
"কিসের অপেক্ষা শান্তম? তুই আমাকে কতোবার আদর করেছিস। কতোবার একসাথে বেড়াতে গিয়ে বাইরে থেকেছি। তোর কিসে আটকেছে? তোর ভাড়া ঘরে কতোদিন রেঁধে খাইয়েছি তোকে। কতোদিন থেকে গেছি। এর পরেও কিসে আটকাবে? তোর মা তো এখুনি আমাদের বিয়েতে এমনিতেই রাজি নন। মনে কর না আমাদের বিয়ের আগে এটা পার্ট টাইম জব।" এতোটা বলে প্রথম শ্বাস নিল নৈঋতা। তার গলায় বিদ্রূপ স্পষ্ট।
"বাজে বকিস নি তো।" শান্তম রীতিমতো বিরক্ত।
"তোকে আমি বিয়ে করতে পারব না শান্তম।" নৈঋতার গলায় তীব্র ভাঙন।
বিস্মিত শান্তম হতভম্বের মতো তাকালো নৈঋতার দিকে।
"তুই তো আমার কথা শুনে বলতেই পারতিস স্যারকে আমরা আমাদের সঙ্গে রাখব। আমাকে হারানোর কথা ভেবেও সে সমাধান একবারও তোর মনে এল না? এতটুকু উদার হতে চাইলি না তুই?"
নৈঋতার গলার কাঠিন্য স্তম্ভিত করে দিল শান্তমকে।
অলঙ্করণ : কুমারেশ দাস
No comments:
Post a Comment